Ad

New Update

ছাত্রজীবনেই হয়ে ওঠো একজন সফল ব্যবসায়ী।

ছাত্রজীবনেই হয়ে ওঠো একজন সফল ব্যবসায়ী।

 

 

ছাত্রজীবন হলো এমনই এক সময়, যে সময়ে মাথার মধ্যে নানান ধরণের চিন্তা কিলবিল করতে থাকে। চিন্তাগুলোর বেশিরভাগই হয় অন্যদের থেকে একটু আলাদা, অন্যদের চোখে অনেকটুকু উদ্ভট। আসলে এই সময়টাতে আমরা বেশ দ্বিধাগ্রস্ত থাকি, নিজেরাও বুঝতে পারি না যে কী করবো, না করবো।
আমাদের মধ্যে এমন অনেকেই আছে, যারা একটু ভালো আঁকতে পারে, খুব সুন্দর ডেকোরেশনের কাজ পারে, কেউ বা অনেক ভাল এডিটিং-এর কাজ পারে। কিশোর থেকে শুরু করে তরুণ, সবাই চায় নিজেদের প্রতিভাগুলো সকলের সামনে তুলে ধরতে। সবাই চায় কারো অধীনে কাজ না করে নিজে থেকে নতুন কিছু করতে। কেউ বা আরো একধাপ এগিয়ে এই সব প্রতিভাগুলোকে ব্যবসায়িক রূপ দিতে চায়। তবে সবাই যে নতুনত্ব আনতে পারে, তা নয়। কেউ শুরুতেই হাল ছেড়ে দেয়, কেউ বা তীরে এসে তরী
ডুবায়।

কিন্তু ব্যবসা করবে বললেই তো হলো না, এ সম্পর্কে ধারণা থাকাও তো প্রয়োজন। আমরা অনেকেই মনে করি কোনো একটা জিনিস বানিয়ে সবাইকে মেসেঞ্জারে নক দিয়ে সেটা কেনার অনুরোধ করার নামই হলো ব্যবসা। আজকাল তো ফেসবুকে যেনতেন করে একটা পেইজ খুলে দিলেই পুরোদস্তর ব্যবসায়ী বনে যায় সবাই। কিন্তু এটাই কি আসল ব্যবসার উদ্দেশ্য? এতে করে কি নিজের এবং নিজের পণ্যের মান ঠিক থাকে?

না থাকে না, এগুলোর কোনোটিই ব্যবসা নয়। ছাত্রজীবনে আমরা পড়াশুনা নিয়ে এতবেশি ব্যস্ত থাকি যে, একটা ব্যবসা দাঁড় করাতে যে পরিমাণ ইচ্ছাশক্তি এবং ধৈর্য থাকা লাগে, তা আমাদের অনেকেরই নেই। কিন্তু আমাদের অনেকেরই ইচ্ছে থাকে পড়াশুনার পাশাপাশি নিজের মতো করে ছোটখাটো একটা ব্যবসা দাঁড় করাতে। এখান থেকে যা আয় হবে তা দিয়ে দিব্যি হাতখরচের টাকা ম্যানেজ হয়ে যাবে।
শুনে কি ব্যাপারটা কঠিন মনে হচ্ছে? খুব সহজ কয়েকটা বিষয়ের কথা মাথায় রেখে কাজ করলে তুমি, হ্যাঁ তুমিও হয়েও উঠতে পারো একজন সফল ব্যবসায়ী।

উদ্দেশ্য ঠিক করে নেওয়া :

ধরা যাক, তুমি বেশ ভাল ছবি আঁকো। সবাই তোমার আঁকার বেশ প্রশংসা করে। তাই তুমি ঠিক করলে ছবি এঁকে আয় করতে পারলে ব্যাপারটা মন্দ হয় না। কিন্তু ছবি আঁকার তো অনেক ধরণ আছে, কোনটা তুমি করতে চাও? হতে পারে সেটা পোর্ট্রেট ড্রয়িং, ক্যারিকেচার কিংবা ফ্যান আর্ট।
তুমি সেই জিনিসটাই করবে যেটাতে তুমি দক্ষ এবং তোমার স্পষ্ট ধারণা আছে। এর পাশাপাশি তোমাকে চিন্তা করতে হবে। তোমার এই ব্যবসায় উপকৃত কারা হবে? যারা উপকৃত হবে তারাই তোমার টার্গেট কাস্টমার।

বিষয়বস্তু নির্বাচন :

মনে করি, তুমি চাইলে ক্যারিকেচার ড্রয়িং করবে। কিন্তু ক্যারিকেচার তো অনেকেই করে, এতে তো কোনো নতুনত্ব নেই। একটু ইউনিক আইডিয়া বের করতে না পারলে তো ব্যবসা জমবে না। তাই তুমি চিন্তা করলে সেটা টিশার্ট এবং রিস্টব্যান্ডের উপরে করবে। আর ক্যারিকেচারগুলো হবে বিখ্যাত কোনো অভিনেতা, ফুটবলার বা সুপারহিরোদের। এছাড়াও কাস্টমাইজড ক্যারিকেচারও করা যেতে পারে, যেখানে ক্রেতাদের ইচ্ছেমত ছবি এঁকে দেওয়া হবে।
কিংবা তুমি যদি মাটির উপর ভাল ছবি আঁকতে পারো সেটাও করতে পারো। অনেকে আবার খুব ভাল ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টের কাজ করে। ইউনিক আইডিয়া নিয়ে তুমিও নিজের কাজে ঝাঁপিয়ে পড়ো!

নাম নির্ধারণ :

উদ্দেশ্য আর বিষয়ের ব্যাপার তো বোঝা গেল, এবার আসি নামের ব্যাপারে। অনেক সময় নাম দিয়েই কর্ম প্রকাশ পায়। একটা ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান যখন দাঁড় করিয়েছি, এর তো একটা ভাল নামও দিতে হবে। নাম ঠিক করার সময় মনে রাখতে হবে তা যেন ব্যবসার আইডিয়ার সাথে যায়, কারো সাথে যেন না মিলে। সেই সাথে নামের আকার হবে ছোট, অর্থবহ কিন্তু শ্রুতিমধুর।

দশে মিলে করি কাজ :

একা একা কাজ করার চেয়ে সমমনা এবং একই বিষয়ে পারদর্শী কয়েকজন বন্ধু মিলে কাজ করলে ভাল হয়। নিজেদের মধ্যে পারস্পারিক বোঝাপড়া ভাল হলে কাজও ভাল হয়। একসাথে নানান অভিনব চিন্তা আসে। আর কাজও খুব দ্রুত এগোতে থাকে। কিন্তু এক্ষেত্রে খুবই বিশ্বস্ত টিমমেট নিতে হবে।
অনেক বিখ্যাত ব্যবসায়ী এবং উদ্যোক্তা কিন্তু একা ব্যবসায় নামেনি। সাথে ছিল তাদের বন্ধুরাও। যেমন গুগলের প্রতিষ্ঠাতা হচ্ছেন দুই বন্ধু ল্যারি পেইজ ও সার্গেই ব্রিন, আর বিখ্যাত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকের প্রতিষ্ঠাতা হচ্ছেন মার্ক জুকারবার্গ এবং তার তিন বন্ধু।

ধাপে ধাপে এগিয়ে যাও :

শুরুতেই তাড়াহুড়োর কোনো কারণ নেই। পরিকল্পনামাফিক ধীরে ধীরে কাজ শুরু করে দিতে হবে। শুরুতেই একটি খাতায় নিজেদের পরিকল্পনা লিখে রাখতে হবে। বাজেট থেকে শুরু করে জিনিসের অর্ডার, মার্কেটিং, কার কী দায়িত্ব সব কোনো এক জায়গায় টুকে রাখতে হবে।
এরপর ফেসবুকে নিজের কোম্পানির নামে একটা পেইজ খুলে সেখানে পণ্যের স্যাম্পল ছবি এবং দাম উল্লেখ করে পোস্ট দিতে হবে। সেই সাথে বন্ধুদেরও পেইজে যুক্ত থাকার জন্য অনুরোধ করতে হবে। পেইজ লাইক বেশি মানেই যে তোমার পণ্য সবার পছন্দ হচ্ছে তা নয়। সবসময় মনে রাখতে হবে যে,

Quality Is Better Than Quantity.

সেই সাথে কোম্পানির একটা দৃষ্টিনন্দন লোগো তৈরি করে ফেললে আরো ভাল হয়। সেই সাথে লিগ্যাল ব্যাপারগুলো মিটিয়ে ফেলাও ভাল।
প্রথমেই ঢালাও ভাবে অর্ডার আসবে না। একটু অপেক্ষা করতে হবে। নিজেদের প্রচারের জন্য কোনো বন্ধুর জন্মদিনে নিজের বানানো টিশার্ট, বুকমার্ক, মাটির গয়না গিফট করা যেতে পারে। বন্ধুর বন্ধুরা যখন এই জিনিসগুলো দেখবে, তখন তারা সেগুলো কেনার আগ্রহ প্রকাশ করতে পারে। আজকাল অনলাইন ব্যবসার বেশ রমরমা অবস্থা। নিজেদের ব্যবসার পসার যখন আরেকটু জমবে, তখন একটা ওয়েবসাইট বানিয়ে অনলাইনে জিনিসের অর্ডার নেওয়া শুরু করে দেওয়া।
ব্যবসার মূল দু’টি জিনিস হচ্ছে মান এবং মূল্য। এই দু’টি ঠিক থাকলে ব্যবসা জমতে বেশি দেরি হবে না।
তাই তোমরা যারা ছাত্রজীবনেই পুরোদস্তর ব্যবসায়ী বনে যেতে চাও, তারা উপরের ধাপগুলো একটু অনুসরণ করলেই কিন্তু সফল হয়ে যেতে পারো। তবে সেই সাথে আরেকটু যোগ করা লাগবে নিজের ইচ্ছেশক্তি, ধৈর্য আর শক্ত মনোবল। তাহলে তোমাকে আর ঠেকায় কে?


 

No comments

Thanks for your comments .