নিজের জন্য বাইক কেনার কথা ভাবছেন? বাইক কিনতে এত জটিলতা কেন?
নিজের জন্য বাইক কেনার কথা ভাবছেন?
Suzuki Gixxer
অনেকেই হয়তো ভাবছেন, ঈদের বোনাসটাকে কাজে লাগিয়ে এবার নিজের জন্য একটি মোটরসাইকেল কিনবেন। শহুরে কর্মব্যস্ত জীবনে দৈনন্দিন যাতায়াতের জন্য নিজের একটি বাহন হবে আপনার। এতে বাঁচবে মূল্যবান সময়, সাশ্রয় করবে অর্থ আর কমাবে ক্লান্তি। সাধ ও সাধ্যের মধ্যে কেমন বাইক কিনবেন—এটা ভেবেই হয়তো হয়রান হয়ে গেছেন বা যাচ্ছেন। সেই ভাবনা সহজ করতে আপনার জন্য বাইক নিয়ে কিছু তথ্য হাজির করা হলো। এর সঙ্গে মিলিয়ে আপনি কিনতে পারবেন আপনার পছন্দের বাইক।
বাজারে প্রয়োজন ও সাধ্যের রকমফের অনুযায়ী বিভিন্ন দাম ও ধরনের মোটরবাইক রয়েছে। বাংলাদেশের বাজারে এই মুহূর্তে ৫০ হাজার টাকার একটু ওপর থেকে শুরু করে ব্র্যান্ড ও মডেলভেদে পাঁচ লাখ টাকারও বেশি দামের বাইক রয়েছে।
বাংলাদেশের বাজারে মোটামুটি চার ধরনের বাইক রয়েছে। এগুলো হলো কমিউটার বাইক, প্রিমিয়াম ক্যাটাগরি বাইক, স্পোর্টস বাইক ও ক্রুজার বাইক। এর বাইরেও কয়েকটি রকমফের রয়েছে।
প্রতিদিনের যাতায়াতের জন্য আরামদায়ক ও তেল–সাশ্রয়ী বাইকগুলোকে সাধারণত বলা হয় কমিউটার বাইক। প্রায় প্রতিটি মোটরসাইকেল কোম্পানিই এ ধরনের বাইক তৈরি করে থাকে। স্বাভাবিকভাবে এ ধরনের বাইক কিনতে গেলে আপনি পাচ্ছেন অনেক বিকল্প পছন্দ। কমিউটার বাইকের মধ্যে একটু কেতাদুরস্তগুলোকে বলা হয় প্রিমিয়াম কমিউটার। ইঞ্জিনের শক্তির দিক থেকে একই রকম হলেও সৌন্দর্যের কারণে এগুলোর দাম একটু বেশি হয়। কমিউটার বাইকের ইঞ্জিন সাধারণত ৮০ থেকে ১২৫ সিসি পর্যন্ত হয়ে থাকে। এ ধরনের বাইকগুলো তেল–সাশ্রয়ী এবং এগুলোর রক্ষণাবেক্ষণ অপেক্ষাকৃত সহজ। কমিউটার বাইক কিনলে আপনার দৈনন্দিন যাতায়াতের খরচ কমে যাবে বেশ খানিকটা। রাস্তায় চলাচলকারী মোটরবাইকগুলোর বেশির ভাগই কমিউটার ক্যাটাগরির বাইক। আমাদের দেশে যেসব কোম্পানির মোটরবাইক বাজারজাত করে, তাদের প্রায় সবাই কমিউটার বাইক তৈরি ও বাজারজাত করে থাকে। কমিউটার বাইকের দাম ওঠানামা করবে ৯০ হাজার টাকা থেকে ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত।
আপনি যদি নিজের জন্য হালফ্যাশনের বাইক খুঁজতে থাকেন, সে ক্ষেত্রেও বাজারে মিলবে অনেক ধরনের বাইক। বাংলাদেশে বর্তমানে ১৬০ সিসি ইঞ্জিন পর্যন্ত মোটরবাইকের অনুমতি রয়েছে। তাই বাংলাদেশের মোটামুটি সব প্রিমিয়াম ক্যাটাগরির বাইকই ১৫০ থেকে ১৬০ সিসি ইঞ্জিনের হয়ে থাকে। সম্ভবত এ মুহূর্তে বাংলাদেশের তরুণদের কাছে সবচেয়ে জনপ্রিয় এ ধরনের বাইকগুলো হচ্ছে ইয়ামাহা ফেজার ও এফ জেড, সুজুকি জিক্সার ও জিক্সার এস এফ, টিভিএস এপাচি ১৫০ ও ১৬০, বাজাজ পালসার ও পালসার এন এস, হিরো হাঙ্ক এবং হোন্ডা হর্নেট। জাপানিজ হোন্ডা একসময় বাংলাদেশের বাজারে রাজত্ব করলেও এ মুহূর্তে প্রিমিয়াম কমিউটারের ক্ষেত্রে একটু পিছিয়ে আছে। এ ছাড়া বাজারে রয়েছে আমাদের দেশি রানারসহ আরও বেশ কিছু দেশি–বিদেশি কোম্পানির এ ধরনের মোটরসাইকেল। এ কেতাদুরস্ত বাইকগুলো আপনাকে দেবে শক্তিশালী ইঞ্জিন, নিয়ন্ত্রণ আর গতির উদ্দামতা। তেলের খরচের দিক থেকে অবশ্য এগুলোর খরচ কমিউটার বাইকের তুলনায় বেশি। আর এ ধরনের বাইকের দাম ওঠানামা করবে দেড় লাখ থেকে তিন লাখ টাকা পর্যন্ত।
এবার আসা যাক স্পোর্টস বাইক ও ক্রুজার বাইকের ব্যাপারে। আমরা অনেকেই টেলিভিশনে মোটরসাইকেলের রেস দেখেছি বা দেখি। রেসের ওই বাইকগুলোর মতো দেখতে আমাদের রাস্তায় যে বাইকগুলো দেখা যায়, সেগুলোই স্পোর্টস বাইক। বাংলাদেশে সিসির সীমাবদ্ধতা থাকায় প্রকৃত স্পোর্টস বাইক পাওয়া না গেলেও একই রকম দেখতে এবং সিসিসীমার মধ্যে শক্তিশালী ইঞ্জিন দিয়ে তৈরি বেশ কিছু বাইক বাজারে রয়েছে। এগুলোর মধ্যে ইয়ামাহার ভি১৫–এর বিভিন্ন সংস্করণ এবং হোন্ডা সিবিআর ১৫০–এর বেশ কিছু সংস্করণ আছে আছে আমাদের দেশে। এর বাইরে চাইনিজ কোম্পানি লিফানও এ ধরনের বাইক বাজারে এনেছে। শক্তিশালী ইঞ্জিন, মসৃণ গিয়ার পরিবর্তন, কেতাদুরস্ত স্পোর্টিং–শৈলীর এই বাইকগুলো আপনাকে দেবে একজন রেসারের অনুভূতি। তবে ঢাকার রাস্তার সবখানে স্পোর্টিং অনুভূতি পাওয়ার সম্ভাবনা কম। বাইকগুলো তেল খরচ ও দামের দিক থেকে ওপরের দিকে। রক্ষণাবেক্ষণও যত্ন নিয়েই করতে হবে। দাম পড়বে তিন লাখ থেকে পাঁচ বা ছয় লাখ টাকা পর্যন্ত।
আরাম করে বেশ বড় আকারের বাইকে বসে এগিয়ে চলছে সিনেমার নায়ক বা ভিলেন—এমন দৃশ্য আমাদের সবার পরিচিত। এই ভারী ফ্রেম আর আরামদায়ক বসার ব্যবস্থাসহ বাইকগুলোই ক্রুজার। ক্রুজার যাত্রীকে দেয় আরামদায়ক যাত্রার অনুভূতি। যদিও জ্যামের রাস্তায় এই বাইক নিয়ে খুব বেশি সুবিধা পাবেন না আপনি। বাংলাদেশে বেশ কিছু কোম্পানি ক্রুজার বাজারে এনেছে। এর মধ্যে সুজুকি ইন্ট্রুডার, রিগাল র্যাপ্টর, ইউ এম কমান্ডার বাইকগুলো বেশ জনপ্রিয়।
বাইকের সঙ্গে সঙ্গে স্কুটার বা স্কুটির আলাপ না করলেই নয়। যাঁরা বাইকের গিয়ার পরিবর্তন, ক্লাচ লিভার—এসবকে বেশ কঠিন বা ঝামেলাপূর্ণ মনে করেন কিন্তু বাইকের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন, তাঁদের জন্যই স্কুটার বা স্কুটি। বাংলাদেশে ভেস্পা, হোন্ডা, সুজুকি, টিভিএস, মাহেন্দ্রসহ আরও অনেক কোম্পানি স্কুটার বা স্কুটি বাজারজাত করছে। পুরুষ ও নারীদের জন্য রয়েছে মনোরম নকশার বিভিন্ন স্কুটার বা স্কুটি। এগুলোর সুবিধা হচ্ছে, গিয়ার পরিবর্তনের ঝামেলা নেই, তাই চালনা অপেক্ষাকৃত সহজ, ইঞ্জিনগুলো বেশ তেল–সাশ্রয়ী এবং প্রায় প্রতিটি স্কুটারেই প্রয়োজনীয় কিছু টুকটাক জিনিসপত্র রাখার জন্য রয়েছে ছোটখাটো কুঠুরির ব্যবস্থা। ব্র্যান্ড অনুযায়ী স্কুটারের দাম বাজারে সাধারণত দেড় লাখ টাকার আশপাশ হয়ে থাকে।
এগুলোর বাইরে খুবই কম দামের মধ্যে বাজারে রয়েছে কিছু মোটরসাইকেল। এগুলো বাজারজাত করছে আমাদের দেশীয় কোম্পানি রানার ও ইন্ডিয়ান টিভিএস। এগুলো আকৃতিতে ছোটখাটো এবং তেল–সাশ্রয়ী। উপযুক্ত রক্ষণাবেক্ষণ এবং যত্নের সঙ্গে ব্যবহার করলে দীর্ঘদিন আপনি নির্বিঘ্নে চলাফেরা করতে পারবেন।
বেশ কিছু বাইক কোম্পানি বিভিন্ন শর্তের কিস্তিতে বাইক বিক্রয় করে থাকে। কিছু কিছু ব্যাংকও বাইক কেনার জন্য লোন দিয়ে থাকে। কোম্পানি বা ব্যাংকভেদে এই কিস্তিগুলো সুদমুক্ত বা সুদযুক্ত হতে পারে। আপনার পছন্দমতো কিস্তির সুবিধা নিতে পারেন বাইক কেনার ক্ষেত্রে।
বাইকের সঙ্গে জড়িত আছে নিরাপত্তা, রক্ষণাবেক্ষণ এবং প্রয়োজনীয় কাগজপত্রের ব্যাপার। বাইক কখনোই হেলমেট ছাড়া চালানো উচিত নয়, সেটি যে গতিবেগেই হোক না কেন। সহযাত্রী থাকলে তার জন্যও হেলমেট ব্যবহার করা আবশ্যক। এটি ব্যক্তিগত নিরাপত্তা ও আইনগত দিক, দুই কারণেই প্রয়োজনীয়। অধিকতর নিয়ন্ত্রণের জন্য ব্যবহার করতে পারেন হাতমোজা। যাঁরা স্পোর্টস বাইক ব্যবহার করবেন, তাঁরা সঙ্গে প্রয়োজনমতো কিনে নিতে পারেন,হাঁটু ও কনুইয়ের জন্য রক্ষামূলক গার্ড।
যেকোনো যন্ত্রই আসলে তার কার্যক্ষমতার জন্য যত্নের সঙ্গে ব্যবহার ও রক্ষণাবেক্ষণের ওপর নির্ভরশীল। প্রতিনিয়ত বাইকের যত্ন এটিকে দেবে দীর্ঘ জীবন, আপনাকে দেবে যাত্রায় নিরাপত্তা ও স্বচ্ছন্দ। বাইকের ম্যানুয়াল বই অনুযায়ী নিয়মিত মোবিল পরিবর্তন, ভালো পেট্রল বা অকটেনের ব্যবহার, নিয়মিত বিরতিতে অনুমোদিত সার্ভিস সেন্টার বা ভালো মেকানিকের কাছে সার্ভিসিং করানো বাইকের রক্ষণাবেক্ষণের জন্য জরুরি।
বাইক নিয়ে রাস্তায় নামতে প্রথমেই যে জিনিসটি প্রয়োজন, সেটি হলো নিজের ড্রাইভিং শিক্ষা। সুষ্ঠুভাবে বাইকটি পরিচালনার সব পদ্ধতি শেখা ও অনুশীলনের পরই উচিত রাস্তায় বাইক চালানো। বাইক চালকের চারটি দলিল বা কাগজের প্রয়োজন হয়—ব্যক্তিগত ড্রাইভিং লাইসেন্স, মোটরসাইকেলের রেজিস্ট্রেশন কার্ড, রুট পারমিট ট্যাক্স টোকেন এবং বাইকের ইনস্যুরেন্স কাগজ। এই চারটি দলিল সঙ্গে না নিয়ে রাস্তায় বাইক চালনা আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ।
দৈনন্দিন জীবনে স্বাচ্ছন্দ্য ও সময় সাশ্রয়ে যাতায়াতের জন্য মোটরসাইকেলটি হয়ে উঠুক আপনার নিত্যকার সঙ্গী।
ভালো মানের বাইক কিনতে ইউটিউবে ভিডিও দেখতে পারেন ।
No comments
Thanks for your comments .